• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১৩ অপরাহ্ন

সংবাদ প্রকাশের জেরে দৈনিক গণকন্ঠের সাংবাদিককে প্রাণনাশের হুমকি দিলেন এসআই‌ আবু তারেক দিপু

ডিমলা(নীলফামারী)প্রতিনিধি / ১৫৯ বার পঠিত
আপডেট: বুধবার, ২০ অক্টোবর, ২০২১

সংবাদ প্রকাশের জেরে নীলফামারীর ডিমলায় সাংবাদিক মহিনুল ইসলাম সুজন কে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে থানা থেকে বেড় করে দেয়া সহ প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ডিমলা থানার এসআই আবু তারেক দিপু’র বিরুদ্ধে।এ ঘটনায় ওই সাংবাদিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিলে সেখানে অভিযুক্ত এসআই তারেকের বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা করে অনেকেই তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

সাংবাদিক মহিনুল ইসলাম সুজন দীর্ঘদিন থেকে ডিমলা প্রেসক্লাবের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম(বিএমএসএফ)ডিমলা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও দি বাংলাদেশ টুডে,দৈনিক গণকন্ঠের ডিমলা উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে সুনামের সহিত নিজ দায়িত্ব পালন করে আসছেন।ঘটনার বিবরণে জানা যায়,শনিবার(১৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে ডিমলা থানার পৃথক অভিযানে ৭ জুয়াড়ি আটকের খবর নিশ্চিত হয়ে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে রাত ১২টার পর তা পোস্ট করে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহে থানায় জান সাংবাদিক সুজন।এসময়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) সিরাজুল ইসলাম ব্যাটমিন্টন খেলতে থাকায় সে সময়ের ডিউটি অফিসার আল মামুনের সাথে ডিউটি অফিসারের রুমে বসে কথা বলছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে আকস্মিক ভাবে এসআই আবু তারেক দিপু এসে আক্রমনাত্মক ভাবে সাংবাদিক মহিনুল ইসলাম সুজনকে সহ পুরো সাংবাদিক পেশাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে থানা থেকে বেড়িয়ে যেতে বলেন।এ সময় এমন আচরণের কারন জানতে চাইলে এসআই তারেক তাকে বলেন,তুই আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছিস,তোর এত সাহস হলো কি করে।ডিমলায় কি শুধু তুই সাংবাদিক, আর সাংবাদিক নেই।তোর মত শত-শত সাংবাদিক আমার পকেটে থাকে।আমি বর্তমান ওসির ভাগ্নে হই সাংবাদিক আমার একটি লোমও ছিড়তে পারবেনা।

পরে কোনো রকম কথা না বলে তিনি ওই সাংবাদিককে চুপচাপ থানা থেকে বেড়িয়ে যেতে বলেন অন্যথায় প্রাণনাশের হুমকি দেন।ওই সাংবাদিক রাতেই ডিমলা থানার ওসি সিরাজুল ইসলামকে মৌখিক ভাবে বিষয়টি অবগত করেন।এসআই তারেকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় আটক ও গ্রেপ্তার বানিজ্য,থানায় পুলিশি সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ, পুলিশের কনস্টেবল সহ সিনিয়র অফিসারদের সাথে খারাপ আচরণের ব্যাপক অভিযোগও রয়েছে।সাংবাদিক মহিনুল ইসলাম সুজন বলেন,গত সোমবার(১১ অক্টোবর)দিবাগত রাতে ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পিছনে অবস্থিত তাইজুল ইসলাম লিটুর বাড়িতে এসআই আবু তারেক দিপু’র নেতৃত্বে সঙ্গীয়ফোর্স অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে জুয়া খেলার সময় হাতে-নাতে ৬ জুয়াড়িকে আটক করেন।পরে আটককৃতদের স্বজনদের সাথে এসআই তারেক অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে তাদের(জুয়াড়িদের)ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন এমন গোপন খবরের ভিত্তিতে থানা গিয়ে এসআই তারেকের কাছে আটককৃতদের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি রহস্যজনক ভাবে জানান, আটককৃতদের জুয়া খেলার অপরাধে আটক করা হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে অন্য লিখিত অভিযোগ আছে।তবে কি অভিযোগ সে বিষয়ে তিনি উপযুক্ত উত্তর দিতে পারেননি।পরে ঘটনাস্থলের এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে নিশ্চিত হয়ে আমি শুধুমাত্র ৬ জন জুয়াড়ি আটকের ব্যাপারে আমার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে একটি লেখা পোস্ট করি।এতে ভেস্তে যায় সব গোপন চুক্তি।ঘটনার পরের দিন জুয়া আইনে মামলা দায়েরের মাধ্যমে আটককৃত ৬ জনকে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।

বিভিন্ন মাধ্যমে ৬ জুয়াড়ির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে এসআই তারেকের দেয়া সেই বক্তব্য সহ সংবাদ তৈরি প্রেরণ করি যা পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।এতেই এসআই তারেক ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আমার প্রতি।সবশেষ গত শনিবার দিবাগত রাতে ডিমলা থানার এসআই তারেক সহ সঙ্গীয়ফোর্স ডিমলা সদর ইউনিয়নের পৃথক দুটি স্থানে অভিযান চালিয়ে ৭ জন জুয়াড়িকে আটক ও দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেন।সেই তথ্য সংগ্রহ করতে আমি রাতে থানা গিয়ে ওসির ব্যাট মিন্টন খেলা শেষের অপেক্ষায় ডিমলা থানার ডিউটি অফিসারের রুমে গিয়ে এএসআই আল মামুনের সাথে কথা বলতে থাকি।

এসময়ে এসআই আবু তারেক দিপু আকস্মিকভাবে এখানে এসে আক্রমনাত্মক ভাবে তুই আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করেছিস,তোর এত বড় সাহস।আমি শুধু একজন এসআই নই ডিমলা থানার ওসির ভাগ্নে তোর মত শত-শত সাংবাদিক আমার পকেটে রয়েছে বলে আমাকে সহ পুরো সাংবাদিক সমাজকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে কোনো তথ্য দেয়া হবেনা জানিয়ে দিয়ে থানা থেকে বেড়িয়ে যেতে বলে অন্যথায় প্রাণনাশের হুমকি দেন।যা থানার ডিউটি অফিসারের রুমের সিসি ক্যামেরায় ধারন‌ হয়ে রয়েছে।আমি বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।আমি আমার জীবনের সাংবাদিকতার শুরু থেকে সাংবাদিক ও পুলিশ একে অপরের পুরিপুরক ভেবেই আন্তরিক ভাবে তাদের সাথে মিলে মিশে কাজ করে আসছি।

এখনও ডিমলা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাকরিরত অসংখ্য পুলিশের সাথে আমার বন্ধুত্ব রয়েছে।তবে এসআই তারেক একজন পুলিশ কর্মকর্তা হবার পরও তার এমন আচরণে আমি নিজেও লজ্জিত।তাই আমি পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে এসআই তারেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই আবু তারেক দিপু বিষয়টি ডিমলা থানার ওসির কাছ থেকে জেনে নিতে বলেন।ডিমলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন,বিষয়টি আমি দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার আগেইতো আপনি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।তা ছাড়া কিছুই হয়নি আমি কি ব্যবস্থা নিব।

আপনার কাছে কি প্রমান আছে।থানার সিসি ক্যামেরা ও তৎকালীন দায়িত্বরত ডিউটি অফিসারের কথা বললে তিনি বলেন,সেগুলো তো আমার প্রমান আপনার কাছে কি প্রমান আছে!এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী পুলিশ সুপার(ডোমার-ডিমলা সার্কেল)আলী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন,বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এ বিষয়ে নীলফামারী পুলিশ সুপার(এসপি)মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান(বিপিএম-পিপিএম)ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলে তার বডিগার্ড একবার রিসিভ করে বলেন,স্যার মিটিংয়ে আছেন তাই তার কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।তবে কোনঠাসায় থাকলেও এ ঘটনায় স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।


আরো পড়ুন