• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন

কমলনগরে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা!! জনতার বিক্ষোভ!!

/ ৬৪৮ বার পঠিত
আপডেট: বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

মোঃ ফয়েজ লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে বালু মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অমান্য করে ভুলুয়া নদী থেকে বালু উত্তোলন করছেন লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজেই।

ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে সেখানের বসতঘর ও ফসলী জমি। যদিও ওই কর্মকর্তা বলছেন বালু উত্তোলন করলে কোন ঝুঁকি থাকে না পরিবেশের।

এদিকে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে অভিযোগ ও বিক্ষোভ মিছিলও করেছে স্থানীয়রা, কিন্তু তাতে কোন লাভ হয়নি। উল্টো হুমকি-ধামকিসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন ইউএনও এবং তার লোকজন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমতি ছাড়াই বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছেন ইউএনও ইমতিয়াজ হোসেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কমলনগর উপজেলার চরঠিকা গ্রামের ‘আছিয়ার বাপের খেয়া’ নামক স্থানে ভুলুয়া নদী থেকে পাঁচটি ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু দিয়ে সেখানকার নদীর তীরবর্তী একটি গুচ্ছগ্রামের জন্য নির্ধারিত জমি ভরাট করা চলছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ জমি বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। কার নির্দেশে উত্তোলন হচ্ছে বালু? এমন প্রশ্নের জবাবে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত কয়েকজন শ্রমিক জানান, ইমতিয়াজ স্যার বলেছেন উত্তোলন করতে তাই করছেন।

ওই স্থানটির দু’পাশে রয়েছে বসতঘরসহ ফসলি জমি। আর নদীর তীরে দাঁড়িয়ে রয়েছে হাজারো মানুষ। তাদের কারো মুখে নেই হাসি, আছে উচ্চকণ্ঠে প্রতিবাদি শ্লোগান। ‘ইউএনওর অবৈধ বালু উত্তোলন, বন্ধ কর-করতে হবে, আশ্রয়হীন করে পুনর্বাসন, মানি না-মানবো না, এক দেশে দুই নীতি, মানি না-মানবো না’। কেউবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছেন, নদী ভেঙ্গে বসত ভিটা নিয়ে গেছে অনেক আগে। পরে এখানে এসে নিয়েছেন আশ্রয়। এখন যদি এই ঘরটিও নদী ভেঙে নেয়, তাহলে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে যাবেন কোথায়! কোথায় নিবেন আশ্রয়। এদিকে বালু উত্তোলনের ফলে ইতিমধ্যে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নে একটি গুচ্ছগ্রাম স্থাপন করার উদ্যোগ নেয় সরকার। চরঠিকা গ্রামের ভুলুয়া নদী তীরের সরকারি খাস জমিতে এই গুচ্ছগ্রামটির কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্বে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা রয়েছেন। অথচ কাজটি দেখাশুনা ও বাস্তবায়ন করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমতিয়াজ হোসেন নিজেই। যদিও সেক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে তেমন কিছু জানানো হয়নি। বালু উত্তোলনের জন্য নেওয়া হয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কোন অনুমতি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন এই গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের ২ একর মাটি ভরাটের জন্য ১০৮ টন চাউল বরাদ্ধ দেওয়া হয়। যার সরকারি মূল্য ৪৬ লাখ ৭৩ হাজার ১’শ ৬০ টাকা। ইতিমধ্যে ৫৪ টন চাউল উত্তোলনের জন্য কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তবে কাজটি চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে শেষ করার কথা ছিলো।

আইনে বলা হয়েছে, বালু মহাল এবং মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী পাম্প বা অন্য কোন মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাইবে না। ওই আইনের (৩) উপ-ধারা (২) এ উল্লেখ রয়েছে ড্রেজিং কার্যক্রম বাল্কহেড বা প্রচলিত বলগেট ড্রেজার ব্যবহার করা যাইবে না। এবং সর্বোপরি এভাবে বালু উত্তোলন আইনত দন্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচ্য হবে। এছাড়াও চলতি বছরের ১৭ জুন (সোমবার) হাইকোর্ট বলেছেন ‘নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে না পারলে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চাকরি ছেড়ে দিতে’। সেখানে একজন ইউএনও নিজেই করছেন বালু উত্তোলন। বিষয়টিতে নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে এখনই ভাঙন দেখা দিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে ফসলী জমি ও বসতঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তাছাড়া নদী পাড়ের গুচ্ছগ্রামটিও তলিয়ে যেতে পারে। বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য ইউএনও মৌখিক বলা হলেও কোন পরিত্রাণ পায়নি। তাইতো বিক্ষোভ মিছিল করে প্রতিবাদ করেছি। এরজন্য ইউএনও এবং তার লোকজন দিয়ে আমাদের হুমকি-ধামকীসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।


আরো পড়ুন