প্রিন্ট এর তারিখঃ মে ৪, ২০২৪, ৪:০৭ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জুন ১৩, ২০২১, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ
নওগাঁর নিয়ামতপুরে পুলিশের সোর্স পরিচয়ে চলছে ছিনতাই চাঁদাবাজী ও মাদক ব্যবসা
নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ নওগাঁর নিয়ামতপুরে পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে চিহ্নিত ছিনতাইকারী ও মাদক ব্যবসায়ী প্রকাশ্যেই চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অপরাধমূলক কর্মকান্ডসহ জমজমাট মাদক ব্যবসা। এসব নামধারী সোর্সদের শিকার হয়ে এলাকার সাধারন মানুষ স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি তাদের আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলতে বসেছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নের মাধইল গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে হাবিবুর রহমান ও হবিবুর রহমানের ছেলে হানিফসহ ২/৩ জন উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নের মাধইল মহাপাড়া, শিকদারপাড়া, দাদরইল সড়কপাড়া, খড়িকাডাংগার সিংড়াপাড়া এলাকায় আদিবাসীদের মাদক ব্যবসা করার জন্য বা পুলিশের কাজ করে দেয়া বা পুলিশ হয়রানী থেকে মুক্তরাখার নামে এলাকায় নিজেদের পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে থাকে এবং বিভিন্ন শ্রেনী ও পেশার সাধারণ মানুষসহ এলাকার আদিবাসীদের কাছ থেকে পুলিশের নামে টাকা আদায় করে থাকে।
কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে এসব নামধারী সোর্স বা মাদক ব্যবসায়ীরা নিজেদের মনোনীত পুলিশের এস, আই ও এ এস আইদের দিয়ে প্রতিপক্ষ মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপরাধীকে ধরে টাকা আদায় শেষে ছেড়ে দেয়াসহ পুলিশী হয়রানী করে থাকে। কখনো বনিবণা না হলে ঘটে বিপত্তি। ওইসব সোর্সরা কৌশলে মাদক দিয়ে পুলিশে দিয়ে ধরিয়ে দিতেও দ্বিধাবোধ করে না। অনেক সময় এসব সোর্সরা নিজেদের অপরাধ ঢাকতে কিংবা যেসব আদিবাসীরা নিজেদের জন্য বাংলা মদ চুয়ানী বা হাড়িয়া তৈরী করে তাদের কাছ থেকে তারা নিয়মিত বকরা আদায় করে থাকে। তাদের বাড়ীর মধ্যে ঢুকে নগদ টাকা, মোবাইল ছিনতাই করে নেয়। তাদের বাঁচাতে পুলিশ সদস্যদের জান্তে বা অজান্তে পুলিশের কাজে বিভিন্ন ভাবে বাঁধা হয়েও দাঁড়ায় এবং পুলিশকে মিথ্যা তথ্যদিয়ে মূল অপরাধীদের রক্ষা করে থাকে।
এছাড়াও ঐসব এলাকায় পুলিশ সোর্স নামধারী উপরোক্তরা প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব লোক দিয়ে চুরি, ছিনতাই পরিচালনাসহ নিজেরা চাঁদাবাজী এমনকি মাদকদ্রব্য গাঁজা বিক্রয়ের সাথে ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত রয়েছে।
উপজেলার মাধইল মহাপাড়ার মৃত শিব মারান্ডির স্ত্রী সেফালী বলেন, আমার কাছ থেকে তারা নগদ ২ হাজার ৫শ টাকা জোর করে ভয় দেখিয়ে নিয়ে গেছে। শুধু তাই নয় চুলার উপর রান্না করা ভাতের হাড়ি ফেলে দিয়েছে। সেদিন আমরা অনাহারে ছিলাম।
হোপনা হাসদার স্ত্রী ফুলমনি কিসকু বলেন, আমার ১১ হাজার টাকার মোবাইল জোর করে ঘরে ঢুকে নিয়ে গেছে। মোবাইলের কথা বললে পুলিশের ভয় দেখায়।
বাবলু চঁড়ের ছেলে সুমন চঁড়ে বলেন, গত ১২ মে উরা আমার কাছ থেকে নগদ ৪ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে আমাদের কাছ থেকে জোর করে পুলিশের ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়ে যায়। সেদিন আমারমহ আরো ৫/৬ জনের কাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা জোর করে নিয়ে নেয়।
রবিন কিসকুর স্ত্রী বিউটি মুর্মু বলেন, হাবিবুর ও হানিফসহ আরো কয়েকজন প্রতি মাসে কখনও কখনও মাসে দুবার আমাদের পুলিশের ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়ে যায়। আমরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য চুয়ানি, হাড়িয়া করে থাকি। কিন্তু তারা আবার বলে আমাদের টাকা দিলে পুলিশ কিছু বলবে না। তারা আমাদের হাড়িয়া, চুয়ানির ব্যবসা করার কথা বলে।
আফাজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল করিম বলে, গত ২৮ মে বরেন্দ্র মাদ্রাসা হাটে আমি বাজার করছিলাম। হঠাৎ হাবিবুর, হানিফসহ আরো ৫/৬ জন আকস্মিক আমার উপর হামলা করে আমার ধান বিক্রি করা ৪০ হাজার ২শ ৫০ টাকা ছিনতাই করে নেয়। আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই তারা পালিয়ে যায়। পরদিন থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েও এখন পর্যন্ত কোন সমাধান পাই নাই। আমরা হাবিবুর বাহিনীর আতঙ্কে আছি।
অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি পুলিশের হয়ে কাজ করি। তাই এলাকার মানুষের খুব হিংসা। সেই হিংসা থেকেই আমার বিরুদ্ধে এধরণের অভিযোগ তুলেছে। আমি কখনও কারো কাছ থেকে কোন টাকা নেয় নাই। আর বরেন্দ্র মাদ্রাসা হাটে যে টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ তুলেছে তা সম্পূর্ন মিথ্যা। আব্দুর করিমের সাথে আমাদের পারিবারিক সমস্যা রয়েছে। সেই বিষেয়ে সেদিন হাটে কথা কাটাকাটি হয়। টাকা ছিনতাই এর কোন ঘটনাই ঘটেনি।
এ ব্যাপারে নিয়ামতপুর থানার অফিসার ইন চার্জ হুমায়ন কবির এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ সোর্স কেনো পৃথিবীর যে কোন ব্যক্তি মাদক ক্রয় বিক্রয়ে জড়িত থাকলে এবং সঠিক তথ্য প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এবং হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় একটি পারিবারিক কলহের কারণে স্থানীয়ভাবে কোন বিচার না পাওয়ায় বরেন্দ্র হাটে হাবিবুর ও আব্দুল করিমের মধ্যে মারামারি হয়ে এক পর্যায়ে পকেটে থাকা টাকা নিয়েছে এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে। পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
Copyright © 2024 Songbad TV. All rights reserved.