• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন

একজন নারীর সঠিক পরিচালনায় একজন সফল মা হওয়া যায়- সৈয়দা রুবীনা

কবি - সৈয়দা রুবীনা / ২৮৫ বার পঠিত
আপডেট: রবিবার, ৯ মে, ২০২১

” মা ”

মা যত জ্বোরেই ডাকা হোক না কেন একই প্রতিধ্বনি হবে । এর ব্যাপক বিশালতা । ” মা” মানে পৃথিবী ।
মা না থাকলে এত সুন্দর পৃথিবীতে চোখ মেলে দেখা যেত না । সপ্তম আশ্চর্যের একটি উপহার ” মা ” এখানে
লুকিয়ে আছে জান্নাত । একজন নারীর শৈশব শুরু হয় পুতুল দিয়ে । সেই পুতুলের মাঝে তাকে রচনা করে মা হিসেবে। তার হাতের পুতুলটিকে সন্তান ভেবে তাকে খাওয়ায়, গোসল দেয় তার পরিপাটি যত্ম করে । বের হয় প্রকৃতির একটা সুন্দর মায়াময়ী রূপ। তখনও সে জানে না যে বড় হয়ে মা হবে ।
তিন কন্যা সন্তানের জননী আমি । আমি কখনও ছেলের জন্য আফশোস করিনি । তারা এক এক জন আমার রাজকন্যা। তাদের বেড়ে ওঠার মাঝে আমি বন্ধু হয়েছি প্রথমে। কখনও ওরা বুঝতেই পারেনি যে , তাদের আর একজন বান্ধবীর প্রয়োজন। একজন মাকে আগে বন্ধু হতে হয় এটা শিখেছিলাম আমার আম্মার কাছ থেকে ।
তথাকথিত সমাজের যে টানাপোড়েন এ থেকে বাঁচা যায় । খেলার সঙ্গী হিসেবে আমিই ছিলাম ওদের খেলার সাথি আর পড়ার জন্য ছিলাম আমিই শিক্ষক। শিক্ষিকা হওয়াই সুবিধাটা ওরা বেশি পেয়েছিল। তবুও কখনও রান্নাঘরে মাদুর পেতেই পাশে বসিয়ে পড়িয়েছি কখনও বা পড়ার টেবিলে স্টুডেন্টদের সাথে। বিরক্ত হইনি কখনও। স্কুল বা কলেজ থেকে এসে ওদের সকল বন্ধুদের কথাগুলো আমাকে বলতেই হবে তখন আমি ধৈর্য্য ধরে শুনেছি। বিনিময়ে ওদের সুন্দর জীবন পেয়েছি এভাবে। কষ্ট হয়েছে প্রচুর। সারারাত জেগে ছুটোছুটি করেছি কার গরম লাগছে দৌড়ে বাতাস করেছি বিদ্যুৎ চলে গেলে , কারও বা পানির দরকার । অসুস্থ হলে সারারাত- দিন কিভাবে গেছে বলতে পারিনি।
তবে সুস্থ হলে মনে রাখিনি, ভুলে যতাম ওদের হাসিমুখ দেখে। ওদের ডিজাইন করে পোশাক তৈরি করেছি কখনও দর্জির কাছে দেইনি ফিটংস-এ সমস্যা হবে, মনের মতো হবে না এগুলো ভাবতাম। এখনও নিজের পোশাকগুলো নিজেই করি বাড়ির সব কাজ- কর্ম করি একা। মাত্র কিছুদিন হলো কাজের একটা মেয়ে রেখেছি তাকেও আমার মেয়ের মতোই সুবিধা দিই। কেন দিই জানি না তবে ভাবি ও একজন নারী আর তার ও অধিকার আছে একটু ছাড় পাওয়া।
আমি নিজেকে দিয়েই আজ ” মা” দিবসের জন্য লিখলাম , বর্তমান মায়েদের জানাতে। আজ সমাজ ব্যবস্থা আস্তে আস্তে অকর্মণ্য হয়ে যাচ্ছে। সন্তানদের অবহেলা করেছেন, তো আজীবন পস্তাতে হবে। আল্লাহর আমানত তার খিয়াবত করা যাবে না। পরবর্তীতে আপনাকে তারা কিভাবে মূল্যায়ণ করবে আসলে এটা ভাগ্য নির্ণয় করে খানিকটা , আবার আমাদের শিক্ষা । মায়ের বিশাল দায়িত্ব একজন নারীকেই নিতে হবে। তারপরও কিছু ব্যতিক্রমী কথা থেকে যায় যা বলা দরকার মনে করছি ।

নোবেল জয়ী ব্রিটিশ সাহিত্যিক উইলিয়াম গোল্ডিং একবার বলেছিলেন যে,
“মেয়েরা বোকা দেখেই তাঁরা পুরুষের সমান অধিকার দাবী করে। কারন মেয়েরা জানে না তাঁরা পুরুষের চেয়ে অনেক বেশী উচ্চতর। মেয়েদের আপনি যায় দেন না কেন, সে সেটাকে আরও উচ্চতর কিছু বানিয়ে দিবে।

আপনি মেয়েদের শুক্রাণু দিবেন সে আপনাকে সন্তান দিবে। আপনি তাকে একটা ঘর দিবেন সে সেটাকে বাড়ি বানিয়ে ফেলবে। আপনি তাকে বাজার দিবেন সে আপনাকে রান্না করে খাবার বানিয়ে দিবে। আপনি তাকে হাসি দিবেন সে আপনাকে হৃদয় দিয়ে দিবে। আপনি যাই দিবেন সে তাই কয়েক গুন মহৎ করে ফেরত দিবে। আপনি যদি তাকে যন্ত্রণা দেন তবে রেডি থাকুন সে আপনার জীবন জাহান্নাম বানিয়ে দিবে। ”

আমিও এ’ কথাটাই বলি কেন পেতে হবে সমান অধিকার যেখানে আল্লাহতায়ালা সর্বগুণ সম্পন্ন করে একজন নারীকে সৃষ্টি করেছেন তো আমরা কম কিসে?
রাসুল (সাঃ) তিনিও নারীকেই সবার উপরে মর্যাদা দিয়েছেন তবে কেন নারী দিবস ? কেন আমাকে চিল্লাতে হবে, আমার অধিকারের জন্য ।
মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত । মা মানে পৃথিবী
পৃথিবীর দিগন্ত ছড়িয়ে যা সবই কল্যানকর । একজন মা সন্তানের ক্ষতি চাই না। তবে সেই সন্তান যখন বড় হয়ে
বলে কি করেছ আমার জন্য তখন কষ্ট লাগে। তারপর ও আশীর্বাদ করে মনে মনে সে সন্তানের জন্য । এই হলো মা । মায়ের সেই ছোট্ট আঁচলের তলায় ১৫/২০ জন এক এক জন সোনার ছেলে বের হয়ে আসার গল্প
অনেক । বাবা বাজার এনেই দায়িত্ব শেষ করেন তবে তা কয়দিন চালাতে সে চিন্তায় সে মা ব্যস্ত থাকেন । কোন পদের সাথে কি মানাবে, কতোটুকু কাকে দিতে হবে, এই যে সবার মন যুগিয়ে চলা, একটা গৃহস্থালিকে একত্র করে চলা একজন নারী, একজন মা পারেন ।
একজন নারী বাইরে কাজ করে এসে আবার বাড়ির কাজ, সন্তান সামলান। রঙিন সূতোয় ভরিয়ে তোলেন বাড়ির শিল্প । কবি হয়ে ছড়িয়ে দেন সমাজ গঠনে লেখা

আমি নারী চাইনা সমান অধিকার
পেতে চাই শান্তি, ভালোবাসা, আদর ।

আমি নারী চাইনা যেতে বৃদ্ধাশ্রম
তোমাদের মাঝে রবো যেখানে দিয়েছি বিনিদ্র শ্রম ।

দশমাস ধরেছি পেটে ভারি লাগেনি তখন
আমিও থাকতে চাই শিশুর মতই এমন ।

তোমাদের ভালোবেসে তুলে দিয়েছি মুখে ভাত
এখনও আশীর্বাদ দিই বুকের মাঝে,রেখেছি এখনও হাত

মনটা আমারও রঙিন তোমাদের মতোই
ছিঁটকে যতই ফেলো আমি খারাপ নই এতই ।

তোমাদের ঢালে নিজেকে সাজাতে পারি না শেষ বয়সে
তাই বলে আমাকে ছেড়ে যেও না তোমরা অবশেষে ।

” পরিশেষে বলব , একজন নারীর সঠিক পরিচালনায় ও
পুরুষের সহযোগিতায় একটা সংসার আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। মা থাকতেই মায়ের মর্যাদা করতে শিখতে হবে।
মা তোমার যেমনই হোক , মনে রাখতে এই মায়ের জন্য দুনিয়া আলো বাতাসে পরিপূর্ণ। কেউ, ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ উকিল , ব্যারিষ্টার, সাংবাদিক, একজন রাষ্ট্র প্রধান ।


আরো পড়ুন